Home অপরাধ পুলিশ ফাঁড়ি থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে গাড়িতে গুলি ছোঁড়া হয়েছে

পুলিশ ফাঁড়ি থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে গাড়িতে গুলি ছোঁড়া হয়েছে

0
PC: Prothom Alo English

হেলমেট পরা এক ব্যক্তি রাস্তার ধারে পার্ক করা একটি সেডান গাড়িতে নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছিলেন। প্রথমে ওই ব্যক্তি গাড়ির টায়ার এবং বনেট লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছিলেন। পরে তিনি ভেতরে থাকা ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে গুলি চালান।

ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। মঙ্গলবার চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কর্মী মুহাম্মদ আব্দুল হাকিম (৫২) কে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ভিডিওতে ঘটনাটি ধরা পড়েছে। যদিও ভিডিওতে দুজনকে দেখা গেছে, তবে ঘটনাস্থলে আরও কয়েকজন ছিলেন, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

হাটহাজারীর মদুনাঘাট বাজারে পানি শোধনাগারের প্রধান ফটকের সামনে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে একটি পুলিশ ফাঁড়ি অবস্থিত। নয় সেকেন্ডের ভিডিওতে পানি শোধনাগারের সামনে একটি সাদা প্রাইভেট কার পার্ক করা থাকতে দেখা যাচ্ছে। ফুটেজে কমপক্ষে পাঁচটি গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। বন্দুকধারীর পাশে হেলমেট পরা আরেক ব্যক্তিকেও দেখা যাচ্ছে, যদিও ভিডিওতে তার গতিবিধি স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে না।

আব্দুল হাকিম রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচখাইন গ্রামের বাসিন্দা। ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তিনি বিএনপির প্রাক্তন কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে, তিনি দলের কোনও পদে ছিলেন না। আদুল হাকিমের ভেষজ পণ্যের ব্যবসা ছিল এবং একটি গবাদি পশুর ফার্ম ছিল। এছাড়াও, তিনি গত বছর বালি উত্তোলনের ব্যবসা শুরু করেছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোর সাথে কথা বলতে গিয়ে, হাটহাজারীর মদুনাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা বলেন, খুনিরা চারটি মোটরসাইকেলে এসেছিল। পুরো ঘটনাটি চার থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঘটে। তারা প্রায় ১০-১২ রাউন্ড গুলি চালায়। এরপর তারা রাউজানের দিকে পালিয়ে যায়। ঘটনার ১০ মিনিটের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

হাটহাজারী সার্কেলের চট্টগ্রাম অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) তারেক আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, মদুনাঘাট তদন্ত কেন্দ্রের টহল পুলিশ নাজুমিয়া হাটে মোতায়েন করা হয়েছে। খবর পেয়ে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান।

তবে, গুলির শব্দে রাস্তায় তীব্র যানজট ছিল। এছাড়াও, দুর্বৃত্তরা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এ কারণেই পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও খুনিদের আটক করতে পারেনি।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মুহাম্মদ আব্দুল হাকিম তার গ্রামের তার দৃঢ় বাড়ি থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি চালকের পাশে বসে ছিলেন। তারা মদুনাঘাট এলাকায় পৌঁছানোর সাথে সাথে চারটি মোটরসাইকেলে করে একদল সশস্ত্র ব্যক্তি তাদের পিছু ধাওয়া শুরু করে। জল শোধনাগারের কাছে পৌঁছানোর পর তারা আব্দুল হাকিমের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এই ঘটনায় আব্দুল হাকিমসহ দুজন গুলিবিদ্ধ হন।

পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান, যেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুল হাকিমকে মৃত ঘোষণা করেন। গুলিবিদ্ধ অপর ব্যক্তির নাম মো. ইসমাইল (৩৮)। তিনি গাড়ির চালক।

প্রথম আলোর সাথে আলাপকালে আব্দুল হাকিমের ভাই মুহাম্মদ পারভেজ বলেন, তার ভাইয়ের কারো সাথে শত্রুতা বা শত্রুতা ছিল না। তিনি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন। তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

১ ঘন্টা সড়ক অবরোধ
এদিকে, হত্যার প্রতিবাদে স্থানীয় বিএনপি নেতারা চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়ক অবরোধ করেন। মঙ্গলবার রাত ৮:৩০ টা থেকে খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে তারা প্রায় এক ঘন্টা চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়ক অবরোধ করেন। ফলে শত শত যানবাহন রাস্তায় আটকা পড়ে।

অবরোধ চলাকালীন বিএনপি নেতাকর্মীরা টায়ারে আগুন ধরিয়ে রাস্তায় অবস্থান নেন। পরে রাত ৯:৩০ টার দিকে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা এসে তাদের আশ্বাস দেন, এরপর তারা রাস্তা ছেড়ে চলে যান।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, অবরোধের কারণে প্রায় এক ঘন্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল, তবে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হওয়ার পরপরই যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।

৫ আগস্ট থেকে রাউজানে সহিংসতায় মোট ১৩ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১০ জন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিএনপির দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের মধ্যে কমপক্ষে একশবার সংঘর্ষ হয়েছে, যার ফলে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছেন।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version