সোমবার ভোরে খাগড়াছড়ির সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের পূর্ণচন্দ্র কার্বারী পাড়ায় অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থীর সন্ধানে অভিযান চালানোর সময় পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর সদস্যরা একটি সন্ত্রাসীর আস্তানা আবিষ্কার করে।
ভোর ৫:০০ টায় যৌথ বাহিনীর সদস্যরা পূর্ণচন্দ্র কার্বারী পাড়ায় অভিযান চালানোর সময় একটি তালাবদ্ধ ঘর দেখতে পান। এরপর তারা স্থানীয়দের সহায়তায় বাড়িতে তল্লাশি চালান।
গোপন আস্তানা থেকে তিন জোড়া পোশাক, ১৯টি ইউনিফর্ম, পিস্তলের গুলি, একটি ওয়াকি-টকি, দুটি মোবাইল ফোন, একটি মাইক্রোফোন, একটি ক্যামেরা, একটি প্রিন্টার, একটি সুইং মেশিন, একটি তাঁবু, একটি জাল, লোহার চেইন, রান্নাঘরের সরঞ্জাম, খাবারের কাঁচামাল এবং চাঁদাবাজির রশিদ উদ্ধার করা হয়েছে, যা ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে অপহৃত শিক্ষার্থীদের বাড়িতে রাখা হয়েছিল কিনা তা জানা যায়নি।
সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি অঞ্চলের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো. আমান হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে অপহৃতদের উদ্ধারের জন্য তারা অনুসন্ধান অভিযান চালিয়ে যাবে।
অভিযান সম্পর্কে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরিফিন জুয়েল প্রথম আলোকে বলেন, যৌথ বাহিনী ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পূর্ণচন্দ্র কার্বারী পাড়ায় ইউপিডিএফের একটি আস্তানা আবিষ্কার করেছে এবং ল্যাপটপ, মোবাইল এবং ওয়াকি-টকি সহ প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।
তিনি আরও বলেন, কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, অপহৃত কোনও ছাত্রকে উদ্ধার করা হয়নি। অপহৃত ছাত্রদের উদ্ধারে তল্লাশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।
নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে, তিনি আরও বলেন।
বুধবার খাগড়াছড়িতে অপহৃত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী এবং একজন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক নিখোঁজ রয়েছেন, যদিও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
১৬ এপ্রিল সকালে খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিইউ) পাঁচ শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় এক অটোরিকশা চালককে অপহরণ করে বন্দুকধারীরা। তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ঐতিহ্যবাহী বিজু উৎসবে যোগদান শেষে ফিরছিল।
অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য রিশন চাকমা; চারুকলা ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের ছাত্র মৈত্রময় চাকমা; চারুকলা ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের ছাত্র অলড্রিন ত্রিপুরা; নাট্য বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ডিব্ব্য চাকমা; এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র লাংগি ম্রো।
অটোরিকশা চালককে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তখন থেকে শিক্ষার্থীরা নিখোঁজ রয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বন্ধুদের সাথে বিজু উৎসব উদযাপন করতে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে গিয়েছিল। চট্টগ্রামে ফেরার বাসের টিকিট না পেয়ে তারা খাগড়াছড়ি শহরের কাছে কুকিছড়া এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাত কাটান।
১৬ এপ্রিল সকালে তারা খাগড়াছড়ি সদরের দিকে একটি অটোরিকশায় করে যান। অভিযোগ, গিরিফুল এলাকায় সশস্ত্র ব্যক্তিরা গাড়ি থামিয়ে চালকসহ পাঁচজন ছাত্রকে অপহরণ করে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস-সন্তু লারমা) ছাত্র সংগঠন পিসিপির সভাপতি নিপুণ ত্রিপুরা শুরু থেকেই অপহরণের জন্য ইউপিডিএফকে দায়ী করে আসছেন।
তবে, ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্যা মারমা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
“আমাদের সংগঠনের এই ঘটনায় কোনও সম্পৃক্ততা নেই। এই ধরণের প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি আমাদের পথ নয়। আমরা শুরু থেকেই ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের বিরুদ্ধে ওকালতি করে আসছি,” তিনি বলেন।