অস্বস্তিকর গরমের পর রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে টানা দুই দিন বৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দিনভর মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। শুধু রংপুরেই ২৪ ঘণ্টায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
শুক্রবার সকাল থেকে রংপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। ভারী বর্ষণে অনেক জায়গায় বন্যা দেখা দিয়েছে। নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। টানা বৃষ্টিতে তিস্তায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানির চাপ সামলাতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ জলকপাট খোলা রাখা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় শুক্র ও শনিবার দুই দিন ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে আগামী দুই দিনে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানির উচ্চতা দ্রুত বাড়তে পারে এবং পরের দিন নদীর উচ্চতা স্থিতিশীল থাকতে পারে। আগামী দুই দিনের মধ্যে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলায় তিস্তা নদীর পানি স্বচ্ছ সতর্ক সীমার মধ্যে প্রবাহিত হতে পারে। এসব এলাকায় উপকূলীয় ও নিচু এলাকায় বন্যার কথা জানিয়েছে বিভাগ।
অন্যদিকে কুড়িগ্রাম জেলার ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি আগামী তিন দিনে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানির স্তর আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল থাকতে পারে, এবং আগামী চার দিনে পানির স্তর বাড়তে পারে।
রংপুরে পানি সম্পদ উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা বাঁধের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৭৬ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার দশমিক ৩৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সকাল ৬টায় একই পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। সকালে তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ২৮.৭৫ সেমি যা (সাধারণত ২৯.৩১ সেমি) সীমারেখার ৫৬.৫৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৬টায় বিপদসীমার ২৪ ইঞ্চি নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।
পানি সম্পদ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ২০.০৪ সেমি (স্বাভাবিক২৩.২৫সেমি), দুধকুমার নদের পাটেশ্বরী পয়েন্টে ২৬.৬৪ সেমি (স্বাভাবিক ২৯.৬০সেমি), কুড়িগ্রামের ডিহার নদীর পয়েন্টে ২২.৯০ সেমি। (নিয়মিত ২৬০৫ সেমি)। ), গাইবান্ধার যমুনা নদীর ফুলছড়ি পয়েন্টে ১৫.২৬সেমি (স্বাভাবিক ১৯.৩৫সেমি), গাখত নদীর গাইবান্ধা পয়েন্টে ১৭.৩৫ সেমি (স্বাভাবিক ২১.২৫ সেমি)।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের জুনিয়র প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন বলেন, টানা বর্ষণে তিস্তায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানির চাপ সামলাতে তিস্তার ৪৪ জলকপাট খোলা রাখা হয়েছে।
তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হাক্কানী বলেন, অকাল বন্যা ও ভাঙনের কারণে প্রতি বছর এক কোটি টাকার সম্পদ তিস্তায় ভেসে যাচ্ছে। এ সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধান করতে হলে নদী খনন, সংরক্ষণ ও তিস্তা মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বে থাকা আবহাওয়াবিদ মো. মোস্তাফিজার রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর জেলায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আজ শুক্রবার রংপুর জেলাসহ দেশের অধিকাংশ স্থানে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া রংপুরের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানান, গত দুই দিন ধরে উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে রংপুর জেলার কোনো নদীর পানি বিপৎসীমার ওপারে প্রবাহিত হয়নি। প্রতিদিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে প্রবাহিত পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার সব নদ-নদীতেও পানির বিল বাড়ছে।