সরকারি চাকরির কোটা পরিবর্তনের একক দাবিকে কেন্দ্র করে উত্তাল দেশ। বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।
২৫ জুলাই মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ অবস্থায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, রামপুর, বগুড়া ও রাজশাহীতে অবস্থান করছে বিজিবি।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকায় একজন ও রংপুরে একজন মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে দুই শিক্ষার্থী ও একজন পথচারী, বাকি দুজনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে সরকারি কর্মচারীদের কোটা পরিবর্তনের দাবিতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে তিনজনে দাঁড়িয়েছে। অন্তত ২০ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
নিহতরা হলেন- চট্টগ্রাম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ওয়াসিম আকরাম, ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য ফারুক ও নোখালী জেলার কর্মশালার কর্মী। অন্যথায়, প্রতিপক্ষের পরিচয় জানা যায় না। তার পিঠে গুলির ছিদ্র রয়েছে।
ওই দিন বিকেল ৩টার দিকে মোরাদপুর, দরওয়াজা ২ ও শুলাশার জেলায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয় এবং কোটা দাঙ্গাকারীদের উসকানি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ও এক পথচারী নিহত হয়েছেন। শুরশহর শিক্ষা বোর্ড এলাকায় কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলছে।
সিএমপি কমিশনার সিফুল ইসলাম জানান, সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, অপরজন পথচারী এবং অপরজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ঢাকা
ঢাকার কলেজের বিপরীতে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রলীগ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক (২৫ বছর বয়সী) নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) এক পথচারী তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ডিএমকে হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের মহাপরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, “তরুণকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মুখে ও কানের নিচে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।” একটি ধারালো অস্ত্র থেকে দেখা যায়। প্রাথমিকভাবে যে পথচারীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তার নাম জানাতে পারেনি।
অজ্ঞাত যুবককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পথচারী আকাশ মাহমুদ বলেন, আমরা তাকে ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশে একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে পড়ে থাকতে দেখেছি। এরপর তারা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
রংপুর
রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
জানা গেছে, এদিন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটার দাবিতে লালবাগ এলাকা থেকে হেঁটে ক্যাম্পাসের দিকে যায়। পরে তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ফলে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। রবির দ্বাদশ শ্রেণির ইংরেজি ছাত্র আবু সাইদ মারা গেছেন।
রংপুর সিটি পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কোটার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। তারা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।” অনেক পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। একজন মারা গেছে শুনেছি, কিন্তু কিভাবে মারা গেছে তা বলতে পারছি না।”
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে চীন সফর উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? কিছুই পাবে না, তাহলে রাজাকারের নাতিরা সব পেয়েছে? প্রধানমন্ত্রী এক ভাষণে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের সন্তান বা নাতি-নাতনি’ বলে উল্লেখ করে অভিযোগ করে রোববার সন্ধ্যায় বিক্ষোভ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীজুড়ে। এখন এই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।