সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের চার দফা দাবিতে আবারও শাহবাগ অবরোধ করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীরা। রোববার (৭ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম শনিবার এর আগে দেশব্যাপী বাংলা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল ও ২০১৮ সালের সার্কুলার পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে সারাদেশে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচি ঘোষণা করে শনিবার নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলা অবরোধ শুধু শাহবাগ নিয়ে নয়। আমরা সায়েন্সল্যাব, মতিঝিল, নীলক্ষেত, চানখারপুল এবং কাটাবন সহ রাজধানীর সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান করব। আন্দোলন সফল করতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমে পড়ুন। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকায় অবস্থানকারীরা মহাসড়ক অবরোধ করবে।
তিনি ধর্মঘটের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দুই থেকে তিন দিন সড়ক বন্ধ করে বাড়ি ফেরার সরকারের ধারণা ভুল। এখন পর্যন্ত আমরা শান্তি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছি। প্রয়োজনে আমরা সারাদেশে সনদ কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
এদিকে ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ স্লোগানে রোববার দুপুর ২টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। বেলা তিনটার আগেই কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে হাজার হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হন। ঠিক তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা শাহবাগে চলে যায়। উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়, সবে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা- কোটা মেধা নয়, মেধাই মেধা; কোটা প্রথা বিলুপ্ত হোক, মেধাবীদের মুক্তি দেওয়া হোক; আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের স্থান নেই; সমঝোতা, লড়াই নয়, লড়াই, লড়াই; সুপ্রিম কোর্ট বা রাজপথ, রাজপথ রাজপথ; “রাজপথে দালালি”, “রাজপথ রাজপথ” ইত্যাদি স্লোগান এবং পোস্টার। প্রদর্শিত হয়
ছাত্রদের চারটি ইচ্ছা আছে:
১/ ২০১৭ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরির জন্য কোটা পদ্ধতি বিলুপ্ত করা হবে এবং মেধার সার্টিফিকেট বহাল থাকবে।
২- ২০১৭ সালের যোগাযোগ অনুসারে, সরকারী পদে (সকল স্তরে) অপর্যাপ্ত এবং বৈষম্যমূলক কোটা দ্রুত দূর করার জন্য একটি কমিশন গঠন করা উচিত এবং শুধুমাত্র অনগ্রসর এবং সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীগুলিকে সংবিধানের বিষয় হিসাবে বিবেচনা করা উচিত।
৩- সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি একাধিকবার প্রয়োগ করা হবে না এবং উপযুক্ত প্রার্থী কোটার সীমা পূরণ না করলে তার কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে শূন্যপদ নির্ধারণ করা হবে।
৪ / দুর্নীতিমুক্ত, সুষ্ঠু ও মেধাবী আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করে আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রলীগের হস্তক্ষেপ নির্বিশেষে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে। হারপাড়া জেলার শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন একত্রে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। আন্দোলনে অংশ নিতে সূর্যসেন হলে শিক্ষার্থীদের করা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন ছাত্রলীগের কর্মকর্তারা। তবে সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থীরা বলছেন, চাঁদা সংগ্রহ ও ব্যানার নিয়ে তারা আবারও কোটেন্ট বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন।
নারী শিক্ষার্থীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ
উদ্ধৃতি বিরোধী আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের অংশগ্রহণ লক্ষণীয়। মহিলা শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন লেকচার হল ত্যাগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে লম্বা লাইনে জড়ো হয়। মেয়েরা প্রতিদিন প্রথম আসে। শাহবাগে কোটাবিরোধী স্লোগান, সংগীত ও প্রতিবাদী কবিতায় মেয়েদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। স্থানীয় অ্যাথলেটিক নেতাদের মতে, প্রথম দুই দিনে মহিলা ছাত্র-অ্যাথলেটদের অংশগ্রহণ কম ছিল। প্রথমে তারা ভয়ে বের হননি। তবে এখন সব হলের বেশি মেয়ে অংশ নিচ্ছে।