Home বাংলাদেশ মধ্যরাতে শনির আখড়ায় সড়কে আগুন অন্তত ২০ জায়গায়

মধ্যরাতে শনির আখড়ায় সড়কে আগুন অন্তত ২০ জায়গায়

3
0

গভীর রাতেও রাজধানীর শনির আখড়া এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বুধবার সন্ধ্যায় রাস্তাঘাটে সরবদের দেখা গেছে। আজ সকাল ১০টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৫ ঘণ্টার বেশি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

রাতে কয়লা থেকে শনির আখড়া পর্যন্ত সড়কে একটি হোর্ডিং দেখা যায় এবং অন্তত ২০টি স্থানে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে ইট-পাটকেল ছড়িয়ে পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা শনির আখড়া কৈলা থেকে রায়েরবাগ হয়ে হোর্ডিং বোর্ড পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে যাত্রাবাড়ী থানার বাইরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে র‌্যাব, পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যরা। কিছুক্ষণ পর নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের দিকে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে শুরু করে। যখনই পুলিশ বিক্ষোভকারীদের তাড়া করে, তারা পালিয়ে যায় এবং রাস্তায় আশ্রয় নেয়।
সন্ধ্যার পর থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে এ অবস্থা চলতে থাকে। এ সময় সড়কে অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন ছিল না। এতে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গভীর রাতে রায়েরবাগের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা রিকশাচালক শাহাবুদ্দিন মাঝির সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শনির আহরা রায়েরবাগ এলাকায় অনেক দিন রিকশা চালান। কিন্তু এমন অবস্থা কখনো দেখিনি। সকাল থেকে এ সড়ক দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। আর সন্ধ্যার পর রাস্তায় শুধু আগুন।

সরকারি চাকরি বরাদ্দ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে যোগ দিতে বুধবার সকাল ১০টায় যাত্রাবাড়ীর স্থানীয় একটি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং শানিল আক্রার দুনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। এরপর থেকে দেশের ব্যস্ত মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী দিনের বেলায় সড়কে যানজট লেগেই থাকে। রাতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে ছয়জন আহত হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তারপর থেকে, শনির আখড়া থেকে মূকনাট্য পর্যন্ত পথের চিত্র বদলাতে শুরু করে। একপর্যায়ে কাজরা এলাকায় মেয়র হানিফ উদাল স্ট্রিটের একটি টোল বুথে আগুন দেওয়া হয়।

দাঙ্গাবাজরা তখন পিছু হটে যখন পুলিশ অফিসাররা তাদের ছত্রভঙ্গ করতে তাদের পিছু ধাওয়া করে। তারা আবার জোট হিসেবে তা অনুসরণ করতে থাকে। একপর্যায়ে দোকানদাররা এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে যে তারা শেনীল আখড়ার কাজিরহ-লিরবাগ সড়কের দুই পাশের দোকান বন্ধ করে দেয়।

এ অবস্থায় রাত ৯টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানার প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন অসংখ্য র‌্যাব সদস্য। এছাড়াও আরও অনেক এপিবিএন সদস্য ছিলেন।

এ সময় যাত্রাবাড়ী থানা সংলগ্ন মাছের খামারের সামনের সড়কে আগুন লাগে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ আধিকারিকদের ধাওয়া দেয়। কিছুক্ষণ পর পুলিশের গুলির শব্দ শোনা যায়। যাত্রাবাড়ী থানার বাইরে অন্তত পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, সন্ধ্যার পর থেকে দাঙ্গাকারীরা একে অপরকে ধাওয়া করছিল। আন্দোলনকারীদের অবস্থান কাজিরেহ এলাকায়।

রাত সাড়ে ৯টার পর বিকল্প সড়ক দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের কাজিরা অংশে যাওয়ার রাস্তায় শতাধিক বিক্ষোভকারী ক্যাম্প করে। তাদের অধিকাংশের হাতে লাঠিসোঁটা। শনির আকরা ও কাজিরার মধ্যে সড়কে অন্তত পাঁচটি আগুন জ্বলছে। কাজিরা থেকে শানির আখড়া এলাকায় প্রধান সড়ক ধরে হেঁটে গেলেই চোখে পড়বে ইট-পাথর দিয়ে রাস্তা পাকা করা। একই ছবি শনির আখড়া রোড থেকে রায়েরবাগ পর্যন্ত। রাস্তার দুপাশে আগুন জ্বলছে। সেখানে অবস্থান নিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।

বেলা সাড়ে ১১টায় রিয়ারবাচ-ওয়াল পদচারী সেতুর নিচে একদল বিক্ষোভকারীকে স্লোগান দিতে দেখা যায়। পাশের রাস্তায় আগুন জ্বলছিল।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, শুধু মহাসড়কই নয়, শনির আখড়া থেকে রায়ের বচ পর্যন্ত সড়কেও আগুন দেওয়া হয়েছে। এসব সড়কে যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে। সাইনবোর্ড অনুসরণ করে সকালে যাত্রাবাড়ী যেতে বাধ্য হচ্ছি।

মাঝরাতে সাইনবোর্ড থেকে হেঁটে যাত্রাবাড়ী পৌঁছান তসলিমা খাতুন নামের ওই নারী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, “আমি কুমিল্লা থেকে এসেছি। সাইনবোর্ডে নামার পর একটা গাড়িও পাওয়া গেল না। অনেকক্ষণ বসে রইলাম সেখানে। পরে মাঝরাতে যাত্রাবাড়ী যেতে হয়।

আটকা পড়েছে শতাধিক গাড়ি
সংঘর্ষে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ সাইনপোস্টে মহাসড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। আহত হয়েছেন এসব যানবাহনের যাত্রী ও চালকরা।

নোয়াখালী-ঢাকা রুটে চলাচলকারী হিমাচল পরিবহনের যাত্রীরা। রাব্বি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার গ্রাম পরিষদ পরিদর্শন করেছেন। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে আটটার দিকে তিনি এই গাড়ি নিয়ে রাজধানীর উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু তার বাস দুই ঘণ্টা সাইনবোর্ডে দাঁড়িয়ে থাকে।

আর কে এন্টারপ্রাইজের কাভার্ড ভ্যান চালক রুবেল মিয়া বিকাল ৫টার দিকে চট্টগ্রাম ছেড়ে রাত ১০টার দিকে সাইনে পৌঁছান। তিনি জানান, ভোরে তার গাড়ি মতিঝিলের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। দুই ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে। গাড়িতে মালামাল আছে। রাস্তায় যত সমস্যাই আসুক না কেন, আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপনাকে ঝুঁকি নিতে হবে।

আনোয়ার সিমেন্ট কোম্পানির চালক নাজির হোসেন প্রথম আলোকে জানান, শনির আহারে ভাঙচুর ও গাড়ি পোড়ানোর কারণে কোনো যানবাহন এগোতে পারেনি। পুরান ঢাকার কদমাতলী কবে পৌঁছাবেন জানেন না। ভাঙচুর ও আগুন লাগার আশঙ্কা রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here