Home বাংলাদেশ মুখ ঢাকা অবস্থায় শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীরা কারা?

মুখ ঢাকা অবস্থায় শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীরা কারা?

1
0
PC: Prothom Alo English

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিইউ) শিক্ষার্থীদের উপর হামলার সময় তাদের কেউ কেউ হেলমেট পরে ছিলেন, কেউ কেউ মুখোশ পরে ছিলেন। তাদের হাতে ছিল চাপাতিও। এমনকি কুপিয়ে আহত হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের লাথিও মারা হয়।

রবিবার দুপুর আড়াইটা নাগাদ চবি ক্যাম্পাস সংলগ্ন জোবরা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এক দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও হামলার সময় মুখোশ পরা ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পারেনি।

রবিবার ভোরে একটি ভাড়া বাড়ির দারোয়ান এক ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করেছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে সংঘর্ষ শুরু হয়। ভোর সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করে দুই পক্ষকে শান্ত করার পর তিন ঘন্টা ধরে সংঘর্ষ চলে।

তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। আবারও সংঘর্ষ শুরু হয় এবং রবিবার দুপুর ১২:০০ টা থেকে বিকাল ৩:০০ টা পর্যন্ত তিন ঘন্টা ধরে চলে। কয়েক দফায় সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০০ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন।

সংঘর্ষের সময় শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা যায় যে, হেলমেট ও মুখোশ পরা কিছু ব্যক্তি শিক্ষার্থীদের উপর সর্বাত্মক আক্রমণ চালায়। তাদের হাতে ছিল চাপাতি, লোহার রড এবং ইটপাটকেল। শিক্ষার্থীদের মাথা, কোমর এবং হাতে আঘাত করা হয়।

প্রথম আলোর সাথে কথা বলতে গিয়ে, চবি শিক্ষার্থী ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, স্থানীয় বাসিন্দারা বিভিন্ন গলিতে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের টেনেহিঁচড়ে মারধর করে। তাদের মধ্যে কিছু হেলমেট ও মুখোশ পরা ছিল। প্রশাসনকে অবশ্যই তাদের খুঁজে বের করতে হবে।

চবি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো. শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হামলার সময় হেলমেট পরা প্রায় ৩০-৪০ জন ছিল। এই ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে হবে। তারা স্থানীয়দের সাথে মিশে শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণ করে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ছাত্র সংগঠন চবি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল (জেসিডি) ইউনিট সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন প্রশাসনকে দোষারোপ করেন। তিনি দাবি করেন যে হাটহাজারী ও ফটিকছড়ির লোকজনকে শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণ করার জন্য ডাকা হয়েছিল।

এদিকে, একদিন পরেও এত বড় ঘটনার জন্য কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি। সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত এই ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানিয়েছেন হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু কাওসার মোহাম্মদ হোসেন।

চবি ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাম্পাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।

কীভাবে সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, দর্শন বিভাগের এক ছাত্রী ক্যাম্পাসের গেট-২ এর কাছে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকে। রবিবার রাত সোয়া ১২টার দিকে ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় ভবনের প্রহরী তাকে লাঞ্ছিত করে বলে অভিযোগ।

খবর পেয়ে গেট-২ এ উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তাকে ধরার চেষ্টা করে। তবে, প্রহরী পালিয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা তাকে ধাওয়া করতে শুরু করলে স্থানীয়রা ঘটনাস্থল লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে, যার ফলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।

প্রথম আলোর সাথে কথা বলতে গিয়ে ভুক্তভোগী বলেন, “আমি সবসময় সময়মতো বাড়ি ফিরে আসি। সেদিনও আমি দেরি করিনি এবং রাত ১২:০০ টার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসি। তবে, প্রহরী গেট খুলছিল না। পরে, আমি তাকে জোরে ডাকলে, সে অকথ্য ভাষায় জবাব দেয়। তারপর আমি প্রতিবাদ করায় সে হঠাৎ আমাকে থাপ্পড় মারে। ঘটনাটি দেখে আমার রুমমেটরা নেমে আসার সাথে সাথেই প্রহরী আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং লাথি মারতে শুরু করে। সেই সময় আমার রুমমেট এবং আশেপাশের লোকেরা আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে।”

খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে, শিক্ষার্থীরা গেট-২ সংলগ্ন জোবরা গ্রামে ভিড় করে। সেখানে স্থানীয়দের সাথে ছাত্রদের বাকবিতণ্ডা হয় যা শেষ পর্যন্ত সংঘর্ষের দিকে পরিচালিত করে।

পরে, সেনা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর উভয় পক্ষ কিছুক্ষণের জন্য পিছু হটে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।

শুধুমাত্র রাতে সংঘর্ষের সময় কমপক্ষে ৭০ জন আহত হয়। এর মধ্যে কমপক্ষে ১০ জনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর জোবরা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা চট্টগ্রাম-হাটহাজারী মহাসড়ক অবরোধ করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here