Home চাকরি কোন চাকরিটি আসলে ভালো? ৫টি মানদণ্ড যা জানা উচিত

কোন চাকরিটি আসলে ভালো? ৫টি মানদণ্ড যা জানা উচিত

1
0
PC: myLIFE

চাকরি মানে কেবল বেতন নয়। চাকরির নিরাপত্তা, কর্মপরিবেশ, নিজের সময়ের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং নিজের ক্ষমতা; যখন এই সব একসাথে জীবনকে সুবিধাজনক করে তোলে, তখন সেই চাকরিকে ‘মানসম্মত চাকরি’ বলা যেতে পারে।

তবে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, কত ঘন ঘন এই ধরনের চাকরি পাওয়া যায় তা অনেকের কাছে স্পষ্টভাবে জানা নেই।

সাম্প্রতিক এক বিশ্বব্যাপী জরিপ অনুসারে, একটি চাকরির মান নির্ধারণের জন্য পাঁচটি মানদণ্ড রয়েছে, যা আপনাকে বুঝতে সাহায্য করতে পারে—আপনার চাকরি সত্যিই সুবিধা, নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ এবং বৃদ্ধির সুযোগ প্রদান করে কিনা।

মার্কিন-ভিত্তিক জরিপ সংস্থা গ্যালাপের মতে, আজ বেশিরভাগ মানুষের চাকরি জীবনের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। ২০২৫ সালের জরিপে অংশগ্রহণকারী ১৮,৪০০ কর্মচারীর অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে গ্যালাপ জানিয়েছে যে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে মাত্র দুজন মনে করেন যে তাদের চাকরি সম্মানজনক, নিরাপদ এবং অগ্রগতির সুযোগে পূর্ণ।

বেতন এবং আর্থিক নিরাপত্তা
বাংলাদেশের বেশিরভাগ কর্মী জানেন না যে তাদের বেতন জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে যথেষ্ট কিনা। একটি গড় মধ্যবিত্ত পরিবারের মাসিক খরচের সাথে বেতনের তুলনা করে একটি কাজের মান মূল্যায়ন করা যেতে পারে।

বিশেষ করে বেসরকারি খাতে, অনেক কর্মকর্তা বা মধ্য-স্তরের কর্মচারী নিয়মিত বেতন বৃদ্ধি পান না এবং অনেক ক্ষেত্রে, এমনকি সময়মতো বেতন পাওয়াও কঠিন।

ঢাকার একটি বহুজাতিক কোম্পানির জুনিয়র অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন, “আমি মাসিক যে বেতন পাই তা শহরের ভাড়া এবং খরচ মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। তাই, আমাকে আরেকটি খণ্ডকালীন চাকরি নিতে হচ্ছে।”

আর্থিক নিরাপত্তা কর্মীদের মানসিকভাবে নিরাপদ বোধ করে, যা কর্মক্ষেত্রে তাদের প্রেরণা বৃদ্ধি করে।

সময় এবং কর্মঘণ্টার উপর নিয়ন্ত্রণ
চাকরির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল নিজের কাজের সময়সূচী এবং কর্মঘণ্টার উপর নিয়ন্ত্রণ। দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান এখনও ক্লক-ইন এবং ক্লক-আউট সিস্টেমের উপর নির্ভর করে।

যখন কর্মীরা তাদের নিজস্ব কাজের সময় বেছে নিতে পারে, তখন মানসিক চাপ হ্রাস পায় এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

যখন সময় এবং কর্মঘণ্টা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তখন কর্মীরা অতিরিক্ত চাপের সম্মুখীন হন, যা মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ এবং প্রভাব

কর্মচারীরা যখন তাদের কাজ, বেতন, নিরাপত্তা এবং নতুন প্রযুক্তি বা প্রক্রিয়া সম্পর্কিত সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ করতে পারে, তখন কাজের মান উন্নত হয়। বাংলাদেশে, এটি প্রায়শই সীমিত থাকে।

ঢাকার একটি ব্যাংকের জুনিয়র অফিসার রকিবুল হক বলেন, “আমরা প্রায়শই নতুন সফ্টওয়্যার বা প্রক্রিয়া সম্পর্কে মতামত দিতে চাই, কিন্তু এগুলি গৃহীত হয় না। ফলস্বরূপ, অনেক ধারণা বাতিল হয়ে যায়।”

যখন অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে, তখন কর্মীরা আরও দায়িত্বশীল বোধ করেন এবং প্রতিষ্ঠানেরও উন্নতি হয়।

সম্মান এবং কাজের পরিবেশ
মানসিক স্বাস্থ্য এবং কর্মক্ষমতার জন্য কর্মীদের সম্মান করা এবং উপযুক্ত কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। বাংলাদেশে শিক্ষিত কর্মীরা সাধারণত সম্মানিত বোধ করেন, তবে কিছু ক্ষেত্রে লিঙ্গ, বয়স, শিক্ষা বা পেশাগত অবস্থার ভিত্তিতে বৈষম্য দেখা দেয়।

অনেক ক্ষেত্রে, মহিলা কর্মীদের মতামত বিবেচনা করা হয় না। পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় তাদের কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। অসম্মানজনক পরিবেশে, কর্মীদের প্রেরণা হ্রাস পায় যা কাজের মানকে প্রভাবিত করে।

প্রশিক্ষণ এবং বৃদ্ধির সুযোগ
চাকরির আরেকটি মানদণ্ড হল আত্ম-উন্নতির সুযোগ। বাংলাদেশে, বৃহৎ কর্পোরেট এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি প্রশিক্ষণ এবং পদোন্নতির সুযোগ প্রদান করে, কিন্তু ছোট প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রায়শই সীমিত বিকল্প থাকে। প্রশিক্ষণ কর্মীদের দক্ষ করে তোলে। নতুন দক্ষতা অর্জন কর্মীদের দীর্ঘমেয়াদে প্রতিষ্ঠানের সাথে মানসিকভাবে জড়িত রাখে।

বাংলাদেশে বাস্তবতা
বাংলাদেশে নারীদের তুলনায় পুরুষদের জন্য “মানসম্মত চাকরি” পাওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা বেশি। শহরাঞ্চলে, বিশেষ করে ঢাকায়, অফিসের চাকরি এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলি আরও ভালো সুযোগ প্রদান করে, কিন্তু গ্রামীণ এলাকায়, অনেক কর্মী এখনও সীমিত সুবিধা নিয়ে কাজ করে।

শিল্প ও পরিষেবা খাতের মধ্যে, ব্যাংকিং, আইটি, বীমা এবং বৃহৎ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা সাধারণত প্রশিক্ষণ, উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা পান। কিন্তু খুচরা, হোটেল, রেস্তোরাঁ বা নির্মাণ ক্ষেত্রে, চাকরির মান তুলনামূলকভাবে কম। তথ্য পর্যালোচনার ভিত্তিতে, বেতন এবং আর্থিক নিরাপত্তা, নিয়ন্ত্রণ, অংশগ্রহণ, সম্মান এবং উন্নয়ন বিবেচনা করে – দেশের মোট চাকরির মাত্র ২৫ থেকে ৩০ শতাংশকে “মানসম্মত চাকরি” হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

একটি চাকরির মান উন্নত করা কেবল আর্থিক দিকগুলির বিষয়ে নয়; এটি মানসিক শান্তি, দক্ষতা এবং অংশগ্রহণের সমন্বয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, তরুণরা যদি এই দিকগুলি বিবেচনা করে চাকরি বেছে নেয়, তাহলে তাদের পেশাগত জীবন আরও উৎপাদনশীল এবং সন্তোষজনক হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here