Home বাংলাদেশ নৈতিক মানের মানদণ্ডে বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র কোথায় দাঁড়িয়ে আছে?

নৈতিক মানের মানদণ্ডে বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র কোথায় দাঁড়িয়ে আছে?

0
0
PC: Prothom Alo English

১৯৯৪ সালে, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে আর্থিক কেলেঙ্কারির পর, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জন মেজর “জনজীবনে আচরণের মান” প্রতিষ্ঠার জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। লর্ড নোলানের নেতৃত্বে, কমিটি তার প্রথম প্রতিবেদনে “জনজীবনের সাতটি নীতি” উপস্থাপন করে, যা জনসেবায় নিয়োজিতদের জন্য নীতিগত নির্দেশিকা হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল।

লর্ড নোলান এই নীতিগুলিকে জনজীবনে সততা, দায়িত্ব এবং স্বচ্ছতার ভিত্তি হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন, যাতে জনসেবায় নিয়োজিতরা তাদের আচরণে এই মূল্যবোধগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। সাতটি নীতি হল: সততা, সততা, বস্তুনিষ্ঠতা, জবাবদিহিতা, নিঃস্বার্থতা, উন্মুক্ততা এবং নেতৃত্ব।

এই নীতিগুলি তখন থেকে বিশ্বের অনেক দেশে প্রশাসনিক নীতিশাস্ত্র শিক্ষার ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে।

বাংলাদেশেও, নোলান কমিটির নীতিগুলি সময়ে সময়ে আলোচনা করা হয়েছে, যদিও যুক্তরাজ্যের মতো নয়, এগুলি আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়নি। তবুও, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, তথ্য অধিকার আইন এবং দুর্নীতিবিরোধী ও সুশাসন সংক্রান্ত নীতিগুলির মতো বিভিন্ন নীতি কাঠামোতে তাদের প্রভাব স্পষ্ট।

এই নীতিগুলি বাংলাদেশের প্রশাসন এবং আমলাতন্ত্রের মধ্যে নীতিশাস্ত্র, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার ভিত্তি তৈরিতে সহায়তা করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, দলীয় নিয়োগ এবং নৈতিক শিথিলতা প্রশাসনিক কাঠামোকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। নোলানের সাতটি নীতির দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে কীভাবে একটি সেবামুখী প্রশাসন ধীরে ধীরে ক্ষমতাকেন্দ্রিক এবং স্বার্থপর ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়েছে।

ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার এবং প্রশাসনিক সংস্কৃতি
বাংলাদেশের মূল প্রশাসনিক কাঠামো বা আমলাতন্ত্র রাষ্ট্র পরিচালনার প্রধান চালিকা শক্তি। কিন্তু এই কাঠামোটি কতটা জনস্বার্থে নিবেদিত? বিশ্বের অনেক দেশ সংস্কার ও আধুনিকীকরণের অংশ হিসেবে নোলানের নীতিগত জনসেবার সাতটি নীতি গ্রহণ করলেও, বাংলাদেশে সেই চেতনা কতটা শিকড় গেড়েছে?

বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র ঔপনিবেশিক যুগে প্রোথিত। ব্রিটিশ প্রশাসনের উদ্দেশ্য ছিল জনসেবা নয় বরং শাসন ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ক্ষমতা সংরক্ষণ। এই কেন্দ্রীভূত এবং কর্তৃত্ববাদী প্রশাসনিক ধরণ পাকিস্তান আমলেও অব্যাহত ছিল।

স্বাধীনতার পর, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিবর্তন ঘটে, কিন্তু প্রশাসনের মৌলিক চরিত্র পরিবর্তিত হয় নি। শাসকরা পরিবর্তিত হন, কিন্তু শাসনব্যবস্থা মূলত একই থাকে। ফলস্বরূপ, জনসেবার নীতির পরিবর্তে ক্ষমতার প্রতি আনুগত্য এবং রাজনৈতিক প্রভাবের সংস্কৃতির স্থলাভিষিক্ত হয়। এর সাথে যোগ হয় দলীয় প্রভাব, আনুগত্যের ভিত্তিতে পদোন্নতি এবং ফাইল-আবদ্ধ পদ্ধতি দ্বারা প্রভাবিত আমলাতান্ত্রিক অনমনীয়তা।

সততা এবং নীতির কাঠামোগত অবনতি
নোলানের প্রথম দুটি নীতি – সততা এবং সততা – জনসেবায় ন্যায্যতা, জবাবদিহিতা এবং নৈতিক সাহসের প্রতীক। তবুও বাংলাদেশের প্রশাসনিক বাস্তবতা প্রায় বিপরীত চিত্র তুলে ধরে।

উদাহরণস্বরূপ, বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের গুরুতর অভিযোগ সত্ত্বেও, প্রাক্তন পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদ তার কর্মজীবনে একাধিক রাষ্ট্রীয় পুরষ্কার এবং পদোন্নতি পেয়েছিলেন। যদিও তার বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং অবৈধ সম্পদের জন্য তার জনসাধারণের পদ ব্যবহার করার অভিযোগ আনা হয়েছিল, প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। ২০২০-২১ সালে, তিনি সততা সহ তার কথিত গুণাবলীর জন্য জাতীয় সততা পুরষ্কারও পেয়েছিলেন।

সম্পূর্ণ বিপরীতে, দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনের ঘটনাটি ভিন্ন গল্প বলে। বেশ কয়েকটি সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্তের পর তাকে কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। সম্প্রতি, আদালত তাকে বরখাস্তকে বেআইনি ঘোষণা করে এবং তাকে পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়। তবুও, তার মামলাটি আমাদের আমলাতন্ত্রে সৎ কর্মকর্তাদের সাথে কী ঘটে তার একটি স্পষ্ট উদাহরণ।

এই দুটি বিপরীত মামলা দেখায় যে বাংলাদেশে, সততা এবং নীতিশাস্ত্র কেবল উপেক্ষা করা হয় না বরং পদ্ধতিগতভাবে দুর্বল করা হয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্তদের পুরস্কৃত করা হয়, অন্যদিকে নৈতিক সাহস প্রদর্শনকারী কর্মকর্তাদের শাস্তি দেওয়া হয়। ফলস্বরূপ, প্রশাসনে এমন একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে যেখানে আনুগত্য এবং আপসকে সততার চেয়ে নিরাপদ পথ হিসাবে দেখা হয়।

নিরপেক্ষতার সংকট, দলীয় আনুগত্যের মাধ্যমে পেশাদারিত্বের অবনতি
নোলানের তৃতীয় নীতি হল নিরপেক্ষতা। এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নির্বিশেষে যোগ্যতা এবং ন্যায্যতার ভিত্তিতে নিজেকে পরিচালনা করা। আজকের বাংলাদেশের প্রশাসনিক বাস্তবতায়, এই নীতি প্রায় বিলুপ্ত।

পতনশীল আওয়ামী লীগ সরকারের সময়, আমলাতন্ত্র ধীরে ধীরে দলীয় আনুগত্যের উপর নির্মিত একটি কাঠামোতে পরিণত হয়, যেখানে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি এবং সুযোগ-সুবিধা মূলত তাদের রাজনৈতিক আনুগত্যের দ্বারা নির্ধারিত হত।

বিশেষ করে, ২০২৪ সালের কারচুপির নির্বাচনের সময়, গণমাধ্যমে অসংখ্য প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে যে অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা প্রকাশ্যে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে কাজ করেছেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তাদের প্রার্থীদের সহায়তা করেছেন।অন্যদিকে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কর্মকর্তারা অথবা যারা নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেছিলেন তারা বহিষ্কার, বদলি, এমনকি প্রশাসনিক হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন।

ফলস্বরূপ, আমলাতন্ত্র ধীরে ধীরে আনুগত্য-ভিত্তিক কাঠামোতে রূপান্তরিত হয়েছে, যেখানে পেশাদার দক্ষতা আর সাফল্য নির্ধারণ করে না, রাজনৈতিক নৈকট্যই করে। এটি নোলানের নিরপেক্ষতার নীতির সরাসরি বিরোধিতা।

জবাবদিহিতার ভাঙা কাঠামো এবং সামগ্রিক পতন
নোলানের চতুর্থ নীতি, জবাবদিহিতা, আজকের বাংলাদেশের প্রশাসনিক বাস্তবতায় প্রায় অর্থহীন হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ তদারকি সংস্থা স্বজনপ্রীতি এবং দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের জালে আটকা পড়েছে। ফলস্বরূপ, অসৎ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর মতো বহিরাগত নজরদারি সংস্থাগুলিও কোনও অর্থবহ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
যদিও কখনও কখনও তুলনামূলকভাবে ক্ষমতাহীন কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়, প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোনও দৃশ্যমান ব্যবস্থা দেখা যায় না। এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে যেখানে শক্তিশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের সুরাহা হয়নি।

ন্যায়পালের অফিসের মতো স্বাধীন জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠানের অনুপস্থিতি প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতাকে আরও প্রকাশ করেছে। ফলস্বরূপ, দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে, আমলাতন্ত্রে অনিয়ন্ত্রিত দুর্নীতির সংস্কৃতি গভীরভাবে প্রোথিত হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রশাসন দক্ষ, কিন্তু এই দক্ষতার বেশিরভাগই জনসাধারণের সেবা করার পরিবর্তে আদেশ অনুসরণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। নোলানের সাতটি নীতি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে জনসাধারণের সেবা কেবল নির্দেশাবলী মেনে চলা নয়, বরং বিবেকের সাথে কাজ করা।

জনস্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ

নোলানের মূল নীতিগুলির মধ্যে একটি হল নিঃস্বার্থতা, ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক স্বার্থ জনসাধারণের কর্তব্য পালনের উপর প্রভাব ফেলবে না। তবুও বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রে এই নীতি প্রায় অনুপস্থিত।

২০২৫ সালের শুরুতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৫৫০ জন কর্মকর্তাকে অতি-সংখ্যাসূচক বা অতিরিক্ত পদে পদোন্নতি দেয়, যা অনুমোদিত শূন্যপদগুলির সংখ্যার চেয়ে বহুগুণ বেশি। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদোন্নতিগুলি যোগ্যতার চেয়ে রাজনৈতিক আনুগত্য বা ব্যক্তিগত সংযোগ দ্বারা বেশি পরিচালিত হয়েছিল।

এটি প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ব্যাহত করেছে এবং দক্ষতা এবং ন্যায্যতা সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছে। ফলস্বরূপ, অনেক কর্মকর্তার প্রেরণা জনস্বার্থ পরিবেশন করা থেকে কেবল তাদের নিজস্ব পদ সুরক্ষিত করার দিকে সরে গেছে।

রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় স্বচ্ছতা এবং নেতৃত্বের সংকট
নোলানের দুটি মৌলিক মূল্যবোধ, স্বচ্ছতা এবং নেতৃত্ব, এখন বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের মধ্যে তীব্র চাপের মধ্যে রয়েছে। স্বচ্ছতা বলতে বোঝায়, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা সহকারে এবং জনস্বার্থে উন্মুক্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।

বাস্তবে, রাজনৈতিক প্রভাব এবং অভ্যন্তরীণ পৃষ্ঠপোষকতা প্রায়শই প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগুলিকে অস্বচ্ছ করে তোলে। এর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হল ২০২৪ সালে কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত একজন সরকারি কর্মকর্তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ করা।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এটিকে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং নৈতিক নেতৃত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করেছে।

যখন অভিযোগের মুখোমুখি ব্যক্তিরা নিজেরাই গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হন, তখন নেতৃত্বের নৈতিক ভিত্তি ভেঙে পড়ে। নেতৃত্ব তখন দায়িত্ব এবং সততার প্রতিনিধিত্ব করা বন্ধ করে দেয়, বরং ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে। এটি স্বচ্ছতাকে দুর্বল করে এবং প্রকৃত নেতৃত্বের পরিবর্তে গোষ্ঠী-ভিত্তিক আনুগত্যের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করে।

অধিকন্তু, ২০০৯ সালের তথ্য অধিকার আইন নাগরিকদের প্রশাসনিক তথ্য অ্যাক্সেসের সাংবিধানিক অধিকার প্রদান করলেও, বেশিরভাগ সরকারি অফিস গোপনীয়তাকে প্রতিরক্ষামূলক ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। ফলস্বরূপ, যেখানে সিদ্ধান্ত এবং ব্যয়ের স্বচ্ছতা গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হওয়া উচিত, সেখানে গোপনীয়তার নীতি রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

পরিবর্তনের পথ
বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের মধ্যে নীতিশাস্ত্রের সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য আইন বা নীতিগত নির্দেশনার চেয়ে বেশি কিছু প্রয়োজন। এর জন্য ব্যবহারিক এবং কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।

প্রথমত, নীতিশাস্ত্র এবং জনসেবার মূল্যবোধকে প্রশাসনিক প্রশিক্ষণের মূল বিষয় হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বর্তমানে, বাংলাদেশ পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং সেন্টার (BPATC) এবং পাবলিক সার্ভিস একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠানগুলি আইন, বিধিবিধান এবং প্রশাসনিক পদ্ধতির উপর জোর দেয়, কিন্তু নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে খুব কম মনোযোগ দেয়।

যুক্তরাজ্যে, সিভিল সার্ভিস প্রশিক্ষণে একটি বাধ্যতামূলক নৈতিক নেতৃত্ব মডিউল অন্তর্ভুক্ত থাকে, যেখানে কর্মকর্তারা বাস্তব জীবনের নৈতিক দ্বিধা নিয়ে আলোচনা করেন, যেমন রাজনৈতিক চাপের মধ্যে সঠিক সিদ্ধান্ত কীভাবে গ্রহণ করা যায়। একইভাবে, দক্ষিণ কোরিয়ার দুর্নীতি দমন ও নাগরিক অধিকার কমিশন (ACRC) সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নিয়মিত নীতিশাস্ত্র কর্মশালা আয়োজন করে, ব্যক্তিগত সততা, জনস্বার্থ এবং নৈতিক নেতৃত্বের পাঠ প্রাতিষ্ঠানিক করে তোলে।

যদি বাংলাদেশে একই ধরণের প্রশিক্ষণ উদ্যোগ চালু করা হয়, তাহলে এটি ধীরে ধীরে আমলাদের সততা-চালিত এবং পরিষেবা-ভিত্তিক শাসনব্যবস্থার প্রতি মানসিকতা পুনর্গঠনে সহায়তা করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা জোরদার করতে হবে। পদোন্নতি, বদলি এবং কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন থেকে রাজনৈতিক প্রভাব অপসারণ করে কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন করা উচিত সততা, দক্ষতা এবং জনসেবার মানদণ্ডের ভিত্তিতে। সিঙ্গাপুরের সিভিল সার্ভিস একটি উদাহরণ হিসেবে কাজ করতে পারে, যেখানে উচ্চ বেতন থাকা সত্ত্বেও, প্রতিটি সিদ্ধান্ত স্বচ্ছ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি কঠোর “শূন্য সহনশীলতা” নীতি কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হয়।

হুইসেলব্লোয়ার সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে, কর্মকর্তাদের নিরাপদে অসদাচরণের প্রতিবেদন করতে উৎসাহিত করা যেতে পারে, যেমনটি দক্ষিণ কোরিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করা হয়েছে। একই সাথে, ই-গভর্নেন্স এবং উন্মুক্ত ডেটা প্ল্যাটফর্ম চালু করা নাগরিকদের তথ্য এবং অংশগ্রহণের অ্যাক্সেস নিশ্চিত করতে পারে। ভারতের আরটিআই অনলাইন এবং এস্তোনিয়ার ই-গভর্নমেন্ট মডেল এই পদ্ধতির সফল উদাহরণ।

পরিশেষে, যদি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের নিজস্ব আচরণে স্বচ্ছতা এবং নীতিগত নেতৃত্বের উদাহরণ স্থাপন করেন, তাহলে এটি নিম্ন স্তরের কর্মীদের অনুপ্রাণিত করবে। নীতিশাস্ত্রের সংস্কৃতি রূপান্তর করা সময়সাপেক্ষ, কিন্তু তা ছাড়া প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতা পুনর্নির্মাণ অসম্ভব।

নীতিশাস্ত্রের পথে ফিরে আসা

বাংলাদেশের প্রশাসন সক্ষম, তবে এই দক্ষতার বেশিরভাগই জনসাধারণের সেবা করার পরিবর্তে আদেশ অনুসরণ করতে ব্যবহৃত হয়। নোলানের সাতটি নীতি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে জনসেবা কেবল নির্দেশাবলী মেনে চলার বিষয় নয়, বরং বিবেকের সাথে কাজ করা। যদি ব্রিটিশ প্রশাসন নোলানের নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিজেকে পুনর্গঠন করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশও একই কাজ করতে পারে। এর জন্য, একটি নৈতিক প্রশাসনিক কাঠামো প্রয়োজন, যেখানে ক্ষমতার চেয়ে সততা, আনুগত্যের চেয়ে দায়িত্ব এবং ভয়ের চেয়ে ন্যায়বিচার বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আমলাতন্ত্রকে জনসেবায় ফিরিয়ে আনতে, আমাদের কাগজের নিয়মের চেয়ে ব্যবহারিক আচরণ এবং সংস্কৃতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। নীতিশাস্ত্র কেবল আইন দ্বারা আরোপ করা যায় না; নেতৃত্বের উদাহরণ, নাগরিকদের দাবি এবং প্রশাসনের নিজস্ব আন্তরিকতার মাধ্যমে এটি গড়ে তুলতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here