বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। আরও খুনের ঘটনা ঘটে। গণহত্যা মামলাটি আন্তর্জাতিক আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। তার (লাল) কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তার ভারত ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে। ভারতীয় আইন অনুযায়ী, শেখ হাসিনা ভিসা ছাড়াই ৪৫ দিন দেশে থাকতে পারেন। ২৭ দিন কেটে গেল আর ১৮ দিন বাকি।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে দুটি বিকল্প রয়েছে। তিনি হয় ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবেন অথবা নয়তো দেশে ফিরে আসবেন।। ৭৭ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর এখন আর কোনো বিকল্প নেই।
ভারত কি শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে? বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালে এ। ছয় বছর ধরে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে আশ্রয়ে ছিলেন হাসিনা।
ভারত বর্তমানে উভয় সংকটে রয়েছে। রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে তারা কি বাংলাদেশের সাথে বৈরী সম্পর্ক গড়ে তুলবে? এই সম্পর্ক এখন অনেক তিক্ত হয়ে গেছে! ভারতবিরোধী মনোভাব এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। ভারতের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বহির্বিশ্বের অনেক প্রশ্ন রয়েছে।
ভারত কি শেখ হাসিনাকে রক্ষা করবে? শেখ হাসিনা তার পাসপোর্ট বাতিল করে এখন শরণার্থী। অন্য দেশে যেতে চাইলেও খুব কষ্ট হয়। হাসিনাকে নিয়ে বাজি ধরছে চীন ও ভারত। দুই দেশই ব্যর্থ হয়েছে। এভাবে জিতেছে আরেকটি দেশ। চীন সতর্ক। ভারত এখনো হাসিনার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু ইতিহাস বলছে অন্য কথা।
দিল্লিতে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর হাসিনার ভবিষ্যত সম্পর্কে স্পষ্ট ছিলেন না। এ অবস্থায় হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলে তার নীতি কী হবে? উভয় সরকারই সংকটে রয়েছে। রাজনৈতিক পণ্ডিতরা মিশ্রিত। হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ভারতের ওপর চাপ বাড়বে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাওহিদ হোসেন এরই মধ্যে এমন বক্তব্য দিয়েছেন।
সেভেন সিস্টার্স নিয়ে চিন্তিত ভারত। হাসিনা আমলে স্বস্তি ছিল। প্রতিটি বিপ্লবের পথ ধরে, অর্জনগুলি হারিয়ে যেতে পারে। তাদের মধ্যেও এই আতঙ্ক বিরাজ করছে। চীন আগমনে হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে আপনার ভয়! এ নিয়ে তাদের মধ্যেও সংশয় রয়েছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বেশ নীরবে তার অবস্থান শক্ত করে চলেছে। ডাক্তার এখন ঢাকায় ক্ষমতায়। মুহাম্মদ ইউনূস। বিশ্বের অধিকাংশ নেতা তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করছেন। তিনি চাইলে অন্তত শতাধিক দেশের সরকারপ্রধানদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এ কারণে ভারত সতর্ক পদক্ষেপ নিচ্ছে।
নরেন্দ্র মোদি সরকারকে আবেগে না পড়ে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশে ফেরার উপায় কি হাসিনার নেই? তারা তার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনবে। বিশ্বের কোনো গণতান্ত্রিক দেশ এটা মেনে নিতে চাইবে না। সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশের প্রতি ভারতীয়দের দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তিত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশের সঙ্গে ভারতের ভালো সম্পর্ক নেই। এটা বাংলাদেশ থেকে এসেছে। ভুল রাজনৈতিক কৌশলের কারণে ভারত এতটা হারতে চায় না। কোটাবিরোধী আন্দোলন যেমন শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ, তেমনি বাংলাদেশে ভারতের অবস্থানও প্রশ্নবিদ্ধ।
সাম্প্রতিক বন্যায় বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভারতীয় নেতৃত্ব বেশ উদ্বিগ্ন বলে মনে হচ্ছে। উত্তরে চীন, পশ্চিমে পাকিস্তান। ভারত আরেকটি নিরাপত্তা ফ্রন্ট খুলবে কি না তা নিয়ে অতীতে বিতর্ক হয়েছে। এটাকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কারণ চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।