Home বাংলাদেশ পরীক্ষা, বিষণ্ণতা এবং শিক্ষার্থীরা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ১০টি উপায়

পরীক্ষা, বিষণ্ণতা এবং শিক্ষার্থীরা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ১০টি উপায়

1
0
PC: Prothom Alo English

পরীক্ষার ফলাফল কী হবে? ভবিষ্যতে কী লুকিয়ে আছে? তারা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে? এই সমস্ত বিষয়গুলি শিক্ষার্থীদের জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে বলে মনে হয়, যা প্রায়শই হতাশার দিকে পরিচালিত করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অভিভাবক এবং সামগ্রিকভাবে সমাজের প্রত্যাশার মধ্যে, পড়াশোনা এখন অনেক শিক্ষার্থীর জন্য আনন্দের উৎস নয়। বরং, এগুলি উদ্বেগ, উদ্বেগ এবং হতাশার উৎস হয়ে ওঠে।

পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন, ভালো ফলাফল অর্জন এবং ভর্তি যুদ্ধে জয়লাভের তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাদের এই অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতায় টেনে এনেছে। এবং যখন একজন পরীক্ষার্থী এই প্রতিযোগিতায় তাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন করতে পারে না, তখন তাদের মনে গভীর মানসিক ক্লান্তি তৈরি হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে, লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে পরীক্ষার্থীরা, বিশেষ করে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে, এবং বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রার্থী এবং শিক্ষার্থীরা, একাডেমিক চাপের কারণে মানসিক ক্লান্তি সহ বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তারা ঘুমের অভাব, খাওয়ার ব্যাধি, সামাজিক যোগাযোগ থেকে সরে আসা, শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি যা তাদের শক্তি নিঃশেষ করে দেয়, এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতাও অনুভব করে। এই নীরব মানসিক যন্ত্রণা আর উপেক্ষা করা যায় না।

অভিভাবক এবং শিক্ষকদের মনে রাখতে হবে যে তাদের সন্তানের হাসি, সুস্থতা এবং মানসিক বিকাশ ভালো ফলাফলের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আসুন আমরা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করি যেখানে শিক্ষার্থীরা অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার পরিবর্তে আত্ম-আবিষ্কারের আনন্দ নিয়ে পড়াশোনা করতে পারে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজির আহমেদ পরীক্ষার্থীদের মানসিক চাপ সম্পর্কে কথা বলেছেন। তিনি এই সমস্যা মোকাবেলায় বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন।

পরীক্ষার্থীদের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের দশটি উপায়
১. বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ: “গোল্ডেন এ+” বা ১০০ শতাংশ নম্বর অর্জনের অবাস্তব চাপের পরিবর্তে, প্রাথমিকভাবে নিজস্ব সামর্থ্য অনুসারে ছোট এবং অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিত। ছোট সাফল্য উদযাপন করা গুরুত্বপূর্ণ।

২. একটি বাস্তবসম্মত রুটিন তৈরি করা: এমন একটি রুটিন তৈরি করা যেখানে স্বাভাবিক দৈনন্দিন কার্যকলাপও যুক্ত হয়, অতিরিক্ত পড়াশোনার চাপ না নিয়ে পড়াশোনা, বিশ্রাম, ঘুম এবং শখের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

৩. “পোমোডোরো কৌশল” ব্যবহার: বিরতি নিয়ে পড়াশোনা।

নির্দিষ্ট বিরতিতে (যেমন, ২৫ মিনিট পড়াশোনা, ৫ মিনিট বিরতি) দীর্ঘ সময় ধরে একটানা পড়াশোনা করার পরিবর্তে মস্তিষ্ক সহজে ক্লান্ত হয় না।

৪. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত ক্যাফেইন, চিনি এবং ফাস্টফুড এড়িয়ে চলা এবং প্রচুর ফল, শাকসবজি এবং জল খাওয়ার অভ্যাস করা, কারণ ক্যাফেইন সাময়িক শক্তি সরবরাহ করে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে উদ্বেগ বাড়াতে পারে।

৫. শখ বা সৃজনশীল কাজ: শখ বা অন্যান্য সৃজনশীল কাজের জন্য সময় বের করা উচিত যেমন ছবি আঁকা, গান শোনা বা বাগান করা, কারণ সৃজনশীলতা মনকে প্রফুল্ল রাখে এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়।

৬. ছোট “পুরষ্কার বিরতি” নেওয়া: প্রথমে ছোট পুরষ্কার বেছে নেওয়া উচিত এবং প্রিয় গান শুনে, পাঁচ মিনিট পোষা প্রাণীর সাথে খেলে, বা প্রিয় খাবার খেয়ে লক্ষ্য অর্জন উদযাপন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস যা ভবিষ্যতের কাজের জন্য অনুপ্রাণিত করে।

৭. ফলাফল সম্পর্কে অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা এড়িয়ে চলা: মনে রাখা উচিত শুধুমাত্র পরীক্ষা জীবন বা ভবিষ্যতের জন্য নির্ধারক নয়। ব্যর্থতা থেকে শেখার মানসিকতা বজায় রাখা।

৮. অন্যের সাথে তুলনা না করা: অন্যের পড়াশোনা বা রুটিন দেখে উদ্বিগ্ন না হয়ে নিজের কাজের উপর মনোযোগ দেওয়া উচিত। নিজের ব্যর্থতাকে অন্যের সাফল্যের সাথে তুলনা না করে বরং তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এগিয়ে যাওয়া।

৯. বাবা-মা, বন্ধুবান্ধব এবং শিক্ষকদের সহানুভূতিশীল আচরণ:

এ ব্যাপারে পিতামাতা, বন্ধুবান্ধব এবং শিক্ষকদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে এবং বাবা-মায়েদের তাদের সন্তানকে অন্যদের সাথে তুলনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। শিক্ষকদের স্পষ্ট করে বলতে হবে যে সাফল্যের কোনও নির্দিষ্ট মাপকাঠি নেই। এবং বন্ধুদেরও তাদের বন্ধুদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে এগিয়ে আসা উচিত।

১০. কাউন্সেলিং: হতাশা বা উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, অবশ্যই একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বা পরামর্শদাতার সাহায্য নেওয়া উচিত। মানসিক সহায়তা চাওয়া সাহসের লক্ষণ, দুর্বলতার নয়।

শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে যে জীবন কেবল পরীক্ষার ফলাফল দ্বারা পরিমাপ করা হয় না। ফলাফল কেবল একটি অস্থায়ী হিসাব, ​​তবে একটি সুস্থ জীবন, আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক শান্তি এর চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান।

বাবা-মা এবং শিক্ষকদের মনে রাখতে হবে যে তাদের সন্তানের হাসি, সুস্থতা এবং মানসিক বিকাশ ভালো ফলাফলের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আসুন আমরা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করি যেখানে শিক্ষার্থীরা অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার পরিবর্তে আত্ম-আবিষ্কারের আনন্দ নিয়ে পড়াশোনা করতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here