জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে যোগদানের জন্য আজ ভোররাতে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট রাত ১:৪০ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
পাঁচ রাজনৈতিক নেতা – বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য-সচিব আখতার হোসেন এবং এনসিপির প্রথম সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা – সরকারী প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার সাথে রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধিদলের সাথে যোগ দেবেন জামায়াত নেতা মোহাম্মদ নকিবুর রহমান।
সফরসূচি অনুযায়ী, অধ্যাপক ইউনূস ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন। প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কারমূলক উদ্যোগ, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের দৃঢ় অঙ্গীকার তুলে ধরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
কর্মকর্তাদের মতে, এই বছরের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ কারণ ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ প্রথমবারের মতো মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে একটি উচ্চ-স্তরের সম্মেলন আয়োজন করবে।
গত বছর অধ্যাপক ইউনূসের একটি প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা সদস্য রাষ্ট্রগুলির সর্বসম্মত সমর্থন লাভ করে।
সম্মেলনের আগে, বাংলাদেশ গত মাসে আন্তর্জাতিক অংশীদার এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সাথে কক্সবাজারে প্রথমবারের মতো “অংশীদারদের সংলাপ” আয়োজন করে।
প্রধান উপদেষ্টা ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ব যুব কর্মসূচীর ৩০তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্য উচ্চ-স্তরের সভায়ও অংশ নেবেন।
বাংলাদেশ নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনায় যোগ দেবে, যা শীর্ষ শান্তিরক্ষী দেশগুলির মধ্যে একটি হিসেবে তার অবদানের কথা তুলে ধরবে।
প্রফেসর ইউনূস শান্তিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন ও জলবায়ু ন্যায়বিচার, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, অবৈধ অর্থ প্রবাহ, নিরাপদ অভিবাসন ও অভিবাসী অধিকার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে টেকসই প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী শান্তির আহ্বান সহ গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এই সফরকালে, প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ মহাসচিবের স্বাগত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং বিশ্ব নেতাদের সাথে একাধিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
এছাড়াও, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন কমনওয়েলথ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সভা, শান্তি বিনির্মাণ কমিশন মন্ত্রী পর্যায়ের, জি৭৭ এবং চীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সভা, নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা ফোকাল পয়েন্ট নেটওয়ার্ক, ওআইসি বার্ষিক সমন্বয় সভা, বিমসটেক, সিআইসিএ এবং এলডিসি মন্ত্রী পর্যায়ের সভাসহ একাধিক বহুপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার ২ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক ২৩-২৭ সেপ্টেম্বর এবং ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে বিশ্ব নেতারা “একসাথে আরও ভালো: শান্তি, উন্নয়ন এবং মানবাধিকারের জন্য ৮০ বছর এবং তারও বেশি সময়” থিমের অধীনে বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জগুলির উপর তাদের অবস্থান নির্ধারণ করবেন।
