বিশ্বে নতুন বছরের শুরুতে প্রযুক্তি খাতে অনেক কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। একই সময় এই খাতটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে (এআই) বিনিয়োগ দ্বিগুণ করেছে। খবর: সিএনএন।
এআই-এর কারণে গত এক বছর ধরে সিলিকন ভ্যালি ও এর বাইরে কর্মীদের চাকরি হারানোর বিষয়টি উদ্বেগের একটি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তবে সেই তুলনায় পর্যাপ্ত কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়নি। যেসব কোম্পানি এআইয়ে বড় বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছে, সেসব কোম্পানি থেকেই কর্মী ছাঁটাই হয়েছে বেশি। কারণ তারা সম্পদ পুনর্বণ্টনের চেষ্টা করছে এবং বেশ কিছু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটায়ের মূল কারণ হিসেবে এআইকে উল্লেখ করেছে।
আগামী বছরগুলোয় এআই প্রযুক্তি খাতটিতে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে, যে কারণে ব্যবসায় নতুন পরিকল্পনা করতে হচ্ছে। কেননা বড় প্রতিষ্ঠান ও স্টার্টআপÑদুই ক্ষেত্রেই কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে।
মহীরুহ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল ও আমাজন উভয়ে এ সপ্তাহে ব্যাপক কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে, যা বিভিন্ন ব্যবসায়িক বিভাগের শত শত কর্মীকে প্রভাবিত করেছে। এই দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি ছাঁটাইয়ের খবরটি এমন সময়ে আসল যখন তারা পৃথকভাবে এআই স্টার্টআপ অ্যানথ্রোপিকে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
চলতি সপ্তাহেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জানিয়েছে, তারা ১৭ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করছে। পোকেমন গো’র মতো জনপ্রিয় মোবাইল গেমে ব্যবহƒত প্রযুক্তি নির্মাতা ইউনিটি সফটওয়্যার জানিয়েছে, তারা ২৫ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করছে। ভাষা শেখার অ্যাপ ডুয়োলিঙ্গো জানিয়েছে, তারা প্রায় ১০ শতাংশ চুক্তিভিত্তিক কর্মী ছাঁটাই করেছে।
সামগ্রিকভাবে ২০২৪ সালের দুই সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে ৫ হাজার পাঁচশর বেশি প্রযুক্তি কর্মী চাকরি হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে লেঅফস ডট এফওয়াইআই।
প্রযুক্তি খাতে দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতার পর সাম্প্রতিক সময়ে এত কর্মী ছাঁটাই করা হচ্ছে। ২০২৩ সালে প্রযুক্তি শিল্পে ২ লাখ ৬২ হাজার ৬৮২ জন কর্মী ছাঁটাই হয়েছে এবং এর আগের বছর ১ লাখ ৬৪ হাজার ৯৬৯ জন কর্মী ছাঁটাই হয়েছিল।
কভিড-১৯ মহামারির শুরুতে ডিজিটাল সেবার আকাশছোঁয়া চাহিদা দেখা দেয়। সে সময় বিশ্বজুড়ে মানুষ বাড়ি থেকে কাজ করতে, সামাজিকীকরণ করতে এবং কেনাকাটা করতে বাধ্য হয়েছিল। তাই প্রযুক্তি খাতে নিয়োগের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী বছরগুলোয় মহামারির বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং বৃহত্তর সামষ্টিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০০০ সালের ডটকম ধসের পর এই খাতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কর্মী ছাঁটাই হয়।
গত বছর চেগ, আইবিএম ও ড্রপবক্স এআই-এর কারণে বিপুলসংখ্যক কর্মী ছাঁটাইয়ের চিন্তা করে। সর্ব সাম্প্রতিক ডুয়োলিংগো ও এমনকি গুগলও একইভাবে কর্মী ছাঁটাই করে এআইয়ে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করে। গবেষকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী কয়েক মিলিয়ন কর্মী চাকরি হারাতে পারে। যদিও এআই প্রযুক্তি একই সঙ্গে ভবিষ্যতে নতুন কর্মসংস্থান করতে পারে।
গোল্ডম্যান স্যাকসের অর্থনীতিবিদরা গত মার্চে এক গবেষণা নোটে বলেছিলেন, জেনারেটরি এআই প্রযুক্তির উত্থানের ফলে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন বা ৩০ কোটি পূর্ণকালীন চাকরি হারানো বা হ্রাস পেতে পারে এবং হোয়াইট কলার কর্মীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। পৃথক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এআই-এর কারণে নারী কর্মীদের চাকরিও ঝুঁকিতে রয়েছে।
প্রযুক্তি শিল্পে ছাঁটাই অব্যাহত থাকার বিষয়টি শ্রম আইনজীবী এবং আইনপ্রণেতারাও বিষয়টি লক্ষ্য করছেন। গুগলের সফটওয়্যার ইঞ্জিনবিয়ার ও অ্যালফাবেট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট পারুল কৌল বলেন, চলতি সপ্তাহে গুগল কর্মীরা ই-মেইলে চাকরি হারানোর খবর জানতে পেরে হতবাক হয়েছেন। তবে গুগলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কর্মীদের আরও দক্ষ হতে এবং আরও ভালোভাবে কাজ করতে সহায়তা করার জন্য এই ছাঁটাই করা হয়েছে। ওদিকে আইনপ্রণেতারা যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম মন্ত্রণালয়কে এই চলমান গণছাঁটাইয়ের দিকে আরও মনোযোগ দেয়ার এবং তাদের জীবিকা হারানোর ঝুঁকিতে থাকা শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য কাজ করার জন্য চাপ দিচ্ছেন।
তথ্য সূত্রঃ sharebiz.net