কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে স্বামী-স্ত্রী ও দুই সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর রানী বাজার শাহী মসজিদ সংলগ্ন শাহজাহান মিয়া ভবনের সাত তলার একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এই বাড়ির বিছানায় এক নারী ও দুই শিশুর রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে, আর একজনের লাশ ফ্যানের সাথে ঝুলছে।
নিহতরা হলেন জনি চন্দ্র বিশ্বাস (৩৫), তার স্ত্রী নিপা মল্লিক (৩০), তাদের ছেলে ধ্রুব বিশ্বাস (৮) ও মেয়ে কাটা বিশ্বাস (৬)। জনির পৈতৃক বাড়ি রায়পুরের আনারবাদ হলেও দীর্ঘদিন ধরে ভৈরবের রানীবাজারে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। পরিবারটি তিন মাস ধরে শাহজাহান মিয়ার বাড়িতে বসবাস করছে।
জনি চন্দ্র বিশ্বাস নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আনারবাদ এলাকার গৌরাঙ্গ চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে। জনি স্থানীয় একটি গ্যারেজে কাজ করতেন। তার স্ত্রী নিপা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
পুলিশ ও প্রতিবেশীদের ধারণা স্বামী জনি সোমবার রাতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার পর কোনো এক সময় আত্মহত্যা করেন। পুলিশ তার বাড়িতে লাশ দেখতে পেয়ে বিছানায় তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে রক্তাক্ত অবস্থায় এবং স্বামী জনির লাশ সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়।
বাড়ির মালিকের স্ত্রী লিনা বেগম জানান, তিন মাস আগে জনি বাড়িতে আসে। এই ঘটনা ভৈরবের মনে দুঃখের ছায়া ফেলে। লাশ দেখতে শত শত মানুষ ঘরে ঢোকে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পুলিশ চারটি লাশ উদ্ধার করে। এবং থানায় নিয়ে যান।
প্রতিবেশী সেরিস্টি বোরমান বলেন, এই ভবনটি সাততলা। এই বিল্ডিং 14 ডবল ইউনিট আছে. তিন মাস আগে জনি একটি বাসা ভাড়া নিয়ে চলে আসে। পরিবারটি দরিদ্র। সোমবার জনি সপরিবারে তার বাবার বাড়িতে যায় এবং সারাদিন কাজ করে রাত ৯টায় ভাইরাওয়ের বাড়িতে ফিরে আসে। রাত ১১টার কিছুক্ষণ পর আমি লক্ষ্য করলাম আমার দরজা বন্ধ। এরপর সে আর কিছুই জানে না।
বাড়ির মালিকের স্ত্রী লিনা বেগম জানান, বিকেল ৩টার দিকে মেরামতকারীরা বাড়িতে আসেন। জনির খোঁজ করতে।
তার ভাষ্যমতে, জনি ভৈরব বাজারের বাগমব্রীতে একটি ময়সান ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাজে না যাওয়ায় ওয়ার্কশপের মালিক তার কর্মচারীদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। আমি যখন বাড়ি ফিরেছিলাম, আমার বেডরুমের দরজা বন্ধ থাকার পরেও আমি ফোন করতে থাকি। এ সময় তিনি দরজায় ধাক্কা দিলেও ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে আমিসহ প্রতিবেশীদের ডাকেন। দরজা ভেঙ্গে তারা ঘরে জনিকে ঝুলন্ত অবস্থায় এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। এ সময় এ খবর শুনে শত শত মানুষ ওই বাড়িতে ছুটে আসেন।
নিহতের মা শেখা রানী বিশ্বাস বলেন, সোমবার আমার ছেলে পরিবার নিয়ে আমার বাড়িতে যায়। সারাদিন ঘর ছেড়ে রাতে ভৈরবের বাড়িতে আসেন। মঙ্গলবার বিকেলে টেলিফোনে তার মৃত্যুর খবর পাই। এ খবর শুনে আমি সঙ্গে সঙ্গে বাহিরবে গিয়ে আমার ছেলে, আমার স্ত্রী ও দুই নাতির লাশ দেখতে পাই। এই কথাগুলো বলতে বলতে সে অজ্ঞান হয়ে গেল।
ভৈরব থানার ওসি মো. শাহিন মিয়া বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেয়ে পরবর্তী তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।