শরৎকালে, দুর্গাপূজা হল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে উৎসবের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রস্তুতিকালে কিশোরগঞ্জে মন্দিরে ঢুকে প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সকালে কিশোরগঞ্জের ত্রিশ এলাকার শ্রী শ্রী গোপীনাথ জিউর আখড়া মন্দিরে এমনই একটি ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, নিরাপত্তার স্বার্থে গত ৫ আগস্ট থেকে কিশোরগঞ্জে হিন্দু-মুসলিমরা শহরের সব মন্দির ও আখড়া পাহারা দিতে শুরু করে। জেলার ৩৬৩টি মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এ বছর প্রথমবারের মতো গোপীনাথ জিউর আখড়ায় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হবে। নিরাপত্তার কারণে স্থানীয় গোপীনাথ সংঘের ছেলেরা সারারাত মন্দিরের আখড়া পাহারা দেয়। সংগঠনের পাঁচ সদস্য ভোর ৩টা পর্যন্ত সতর্ক ছিলেন। সকালে ঘুমিয়ে পড়েছিলে। এমন সময় কেউ মন্দিরে ঢুকে সব মূর্তি ভেঙ্গে ফেলে। পরে স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলে প্রশাসনের লোকজন আখড়া পরিদর্শন করেন।
স্থানীয় পূজারীরা জানায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য এই জঘন্য কাজ করা হয়েছে বলে স্থানীয় বিশ্বাসীরা জানিয়েছেন। ভোরবেলা সব মূর্তি ভেঙে ফেলা হয়। পূজা নিয়ে আমরা এখন সিদ্ধান্তহীন। এই মন্দিরে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। অবশ্য সব পূজাই এই মন্দিরে হয়। এবার দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এই দেশে আমরা সবাই একসাথে থাকি। কেন এমন হওয়া উচিত? কিশোরগঞ্জে আমরা সবাই যার যার মত করে ধর্ম পালন করি। আমরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার চাই।
গোপীনাথ জিউর আখড়া দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সজীব কুমার সাহা বলেন, আমরা দুই মাস ধরে এই মন্দির পাহারা দিচ্ছি। প্রতি রাতে 5-7 টি দল পাহারা দেয়। আমি এই বছর প্রথম দুর্গাপূজা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই অনুযায়ী পূজার আয়োজন করা হবে। সবকিছু ঠিকঠাক চলল। এখন যা বাকি আছে তা হল রং করা এবং সাজানো। এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে সব প্রতিমা ধ্বংস করা হয়।আমাদের যারা পাহারায় থাকেন তারা রাত ৩টা পর্যন্ত সজাগ ছিলেন। একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়লে কে বা কারা মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করে চলে যায়।
জেলা পূজা উদযাপন কেন্দ্র পরিষদের সভাপতি নারায়ণ দত্ত প্রদীপ বলেন, আমরা পূজা সুন্দরভাবে করতে চাই। আমরা সরকারের কাছে তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাই। মন্দিরে সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকলেও মন্দিরের আশেপাশে থাকা ক্যামেরাকে যারা প্রতিমা ভাঙচুর করেছে তাদের চিহ্নিত করতে বলেছি। ঘটনার পর সকালে মন্দির পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসন। দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাদের নিয়ে এক জরুরি সভা ডাকা হয়।
পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে আমরা মন্দির পরিদর্শন করেছি। ঘটনার তদন্ত চলছে। দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে। প্রতিটি মন্দিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। দুর্গাপূজা উৎসব যেন সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয় সেইভাবে কাজ করা হচ্ছে।