সরকারি চাকরিতে কোটা লঙ্ঘন করে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো সোমবার বিকেল থেকে রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকা স্থবির হয়ে পড়ে। গুলিস্তান, শাহবাগ, ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়সহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। এর মধ্য দিয়ে কোনো গাড়ি চলতে পারবে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে। যারা কাজ শেষে বাড়ি যায় তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অন্য যাত্রীরাও সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন।
দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে থাকার পর যাত্রীরা বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে চলে যান। ভুগতে হয় অসুস্থ ও বৃদ্ধদের। বিকেলে বিজ্ঞান গবেষণাগার এলাকায় এমনই একটি চিত্রকর্ম দেখা যেত। আমেনা বেগম নামে ৬৬ বছর বয়সী এক নারী ট্রান্স সিলভা পরিবহনের একটি বাসে মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ী যাচ্ছিলেন। তার সঙ্গে দুটি বড় ব্যাগ ছিল। আধঘণ্টা ধরে বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারের প্যাসেজে বসে রইলেন। যানজটের কারণে অন্য সব যাত্রী বাস থেকে নেমে সড়কে ধাক্কা মারে। একপর্যায়ে ওই নারীও বাস থেকে নেমে যান। দুই ব্যাগ নিয়ে হাঁটা তার জন্য কষ্টকর ছিল। সেখানে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লে শিক্ষার্থীরা এসে তাকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় করে নীলক্ষেত মোড়ে নিয়ে যায়।
মোড়ের কাছে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রান্স সিলভা পরিবহনের বাসচালক সাগর খান প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রাবাড়ী যাওয়ার পথে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এখানে আটকে ছিলেন। যাত্রীরা সবাই বেরিয়ে পড়ল।
বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে সড়ক অবরোধ করে। মিরপুর রোড ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তা প্রায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে বোঝা যায়, রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন ছাড়েনি আন্দোলনকারীরা।
তাদের বিক্ষোভের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের জন্য কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের সরকারি পরিপত্র প্রত্যাহারসহ চার দফা দাবি করছে। এই অভিযানের অংশ হিসেবে বাংলা লক কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহবাগ, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল জংশন, জারবখানা রোড, মৎসিয়া ভবন, গোলেস্তানের জিরো পয়েন্ট, বাংলাবাজার জংশন, চানকরপুর, বাংলা মোটর, ক্যারাভান, বাজার রোড ও দ্য গেট অব দ্য গেট। খামার বন্ধ ছিল। আজ বিকেল ৪টার পর
আন্দোলনকারীরা মোড়ে অবস্থান নিলে আশপাশের সড়কে চলাচলকারী গাড়ি আটকে যায়। আপনার সামনে পিছনে যাওয়ার বিকল্প নেই। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শাহবাগ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত রাস্তাটি দেখা গেলেও প্রতি কোণায় তা অবরোধ করে রেখেছে দাঙ্গাবাজরা। অ্যাম্বুলেন্স এবং মিডিয়া যানবাহন ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন অনুমোদিত নয়।
যান চলাচল বন্ধ থাকায় অনেকেই বিকল্প হিসেবে মেট্রো রেল ব্যবহার করছেন। আপনি যদি শাহবাগ এবং বাজার কারওয়ান মেট্রো স্টেশনে যান তবে আপনি লক্ষ্য করবেন যে মেট্রো স্টেশনগুলিতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভিড়। টিকিট কেনার জন্য রেলস্টেশনে ছিল দীর্ঘ লাইন। অনেকেই এই প্ল্যাটফর্মে টিকিট কিনেছেন। সাধারণত যখন একটি ট্রেন আসে তখন একই সময়ে সমস্ত যাত্রীদের স্টেশনে ওঠার অনুমতি দেওয়া হয়, তবে আজ বিকেলে আমরা ট্রেন থেকে নামতে সক্ষম হয়েছি যখন দুটি বা তিনটি ট্রেন লাইনে দাঁড়িয়ে আছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা প্রত্যাহারের প্রতিবাদে বিকেলে গুলিস্তানের নূর হোসেন স্কয়ার দখল করে বিক্ষোভ করেছে। তাদের একদল ফাঁকা রাস্তায় ফুটবল খেলতে থাকে।
সড়ক বন্ধ থাকায় এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রীরা গাড়ি থেকে নেমে সড়কে ধাক্কা মারে। শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে সাধারণ পথচারীদেরও চত্বর দিয়ে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ফলে অনেক যাত্রী বিরক্ত হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় রাস্তায় ফুটবল ম্যাচের সমালোচনা করলে শিক্ষার্থীরা বল কেড়ে নেয়। জিজ্ঞাসা করা হলে ছাত্রটি উত্তর দেয়, “আমি জানি না কে বল এনেছে।” কিন্তু এটা একটা মজার ব্যাপার। তাই আমাদের রাস্তায় খেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
স্বাভাবিক সময়েও পুরান ঢাকায় যানজট লেগেই থাকে। সেখানে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়, এবং দুর্ভোগ একটি ভিন্ন মাত্রা নেয়। সেলিম আনোয়ার জরুরি কাজে ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতে যান। বিকেলে কাজ শেষ করে তিনি পায়ে হেঁটে গুলিস্তান মোড় পার হন, কোনো গাড়ি না পেয়ে।
গুলিস্তান মোড়ে সেলিম আনোয়ার বলেন, যাওয়ার পর রাস্তায় শুধু গাড়ি ছিল, তাই গাড়ি বা রিকশা পাচ্ছিলাম না। আমাদের গাবতলী যেতে হবে। তাই আমি যতদূর যেতে পারি।
সদরঘাট থেকে গাজীপুর রুটে চলাচলকারী আজমেরী পরিবহনের একটি বাসের চালক আজগর আলী বলেন, বিকেল থেকে যানজট শুরু হয়।