প্রায় ৩৩ বছর পর বন্যা কবলিত হয়েছে চট্টগ্রামের ১৬টি জেলা। বন্যায় ৫০ হাজার পরিবারের অন্তত তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ১৯৯১ সালের শুরুতে, বন্যার কারণে এই অঞ্চলের সমস্ত জেলায় জলস্তর বেড়ে যায়।মাঝে কয়েক বছর বিরতি দিয়ে ১৯৯৮ সালের বন্যাও ভাবিয়ে তোলে চট্টগ্রামবাসীকে।
কিন্তু সে সময়ের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছাপিয়ে গেছে গত চলতি বন্যা। এই বন্যা দীর্ঘ মেয়াদি হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকালে ভারী বর্ষণে জলস্তর আরও বাড়তে পারে।
এদিকে অতিবৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
এতে নিচু ঘরগুলো ডুবে যায়। ফলে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সীতাকোন্ডা, মিরসরাই, আনোয়ারা, সীতাকোন্ডা, বোরকালি ও ফটিকছড়িসহ ১৬টি জেলা এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমপক্ষে ৫০ হাজার পরিবারের প্রায় ৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এর মধ্যে ফটিকছড়ি জেলার ১৩টি ইউনিয়নে ৩,১৭৫টি পরিবার প্লাবিত হয়েছে, যার ফলে প্রায় ১৫,৯০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মিরসরাই জেলায় ১২টি ইউনিয়নে ১২ হাজার পরিবার পানি সংকটের সম্মুখীন এবং প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানি সংকটের সম্মুখীন, অন্যদিকে সীতাকোন্ডা জেলায় ছয়টি ইউনিয়নের ৫ হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানি সংকটের সম্মুখীন। এ ছাড়া আনোয়ার, বুয়ালখালীসহ আরও ১৬টি শহরের বহু মানুষ পানিতে আটকা পড়েছে।
একই সঙ্গে নগরীর অধিকাংশ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যাও কম।
এতে কর্মজীবী মানুষের চলাচলে বেগ পেতে হচ্ছে, গন্তব্যে যেতে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
দেখা গেল, শহরের বেশিরভাগ রাস্তাই পানির নিচে। বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, মোহাম্মদপুর, শুলকবাহার, বাদুরতলা, চকবাজার, বাকলিয়া, রাহাত্তারপুল, ডিসি রোড ও আগ্রাবাদ সড়কে হাঁটু পানি জমে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এলাকার অনেক বাড়িতেই প্রথম তলায় পানি ঢুকে গেছে।
নগরীর রাহাত্তারপুল এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ গোলাম নবী বলেন, আমাদের এলাকার বেশির ভাগ বাড়ির প্রথম তলা পানিতে তলিয়ে গেছে।
চকবাজার এলাকার বাসিন্দা অনিক রায় বলেন, “আপনার বাড়িতে পানি উঠলে কেমন ব্যথা হয়? আপনি এটি আপনার বাড়িতে না দেখলে বুঝতে পারবেন না।” এর চেয়ে কঠিন আর কিছু নেই।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের আগে চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। বন্যা পূর্বাভাস ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র এবং আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ভূমিধস ও বন্যার হুমকির বিষয়ে সতর্ক করেছেন।