সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির কিছু জায়গায় উন্নতি হয়েছে এবং কিছু জায়গায় অবনতি হয়েছে। গত দুই দিনে বৃষ্টিপাত কমেছে এবং নদীর পানিও কমছে। এতে উপরের দিকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আর ভাটি এলাকা দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় নিচু এলাকায় কিছুটা অবনতি হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট জেলায় আরও প্রায় ১০ লাখ মানুষ প্লাবিত হয়েছে। সব মিলিয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। পানিসম্পদ উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সুরমা ও কুশিয়ারার পানির স্তর সব স্থানেই বিপদসীমার ওপরে রয়েছে।
সূত্র জানায়, দুই দিনে সিলেটে বৃষ্টিপাত কমেছে। উজান থেকে আসা আসাও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। জেলার প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সব নদ-নদীর পানির স্তর কমতে থাকে। বৃহস্পতিবারের তুলনায় শুক্রবার নদীতে পানির স্তর আরও কমেছে। পাঁচ দিন পর শুক্রবার ভোরে সিলেটের আকাশে দেখা দিয়েছে সূর্য। জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, আজ বৃষ্টি না হওয়ায় পানির স্তর কিছুটা কমতে শুরু করেছে। বৃষ্টি ও ভূমিধস না হলে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।
পাউবো সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি কানিঘাট পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার এবং সিলেট পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার কমেছে। কুশিয়ারা নদীর জলস্তর আমলসিদ পয়েন্টে ৪৫ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ৩৬ মিটার এবং শেরপুর পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার কমেছে। তবে উভয় নদীর পানির স্তর সব জায়গায় বিপজ্জনক মাত্রার উপরে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় লোভা, সারি, ডাউকি, সারিগোইন ও ধলাই নদীর পানির উচ্চতা কমেছে।
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সিলেট মহানগরী ও এ জেলার ১৩টি উপজেলায় পানির নিচে আটকা পড়েছেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ১৬১ জন। একই সঙ্গে গতকাল পানিতে আটকে পড়া মানুষের সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৮ জন। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় পানির নিচে আটকে পড়া মানুষের সংখ্যা ৮৫,৭১৩ জনে পৌঁছেছে। সিলেট পৌর কর্পোরেশনের ২৯টি ওয়ার্ডসহ জেলার ১৩টি উপজেলায় ৭১৩টি উচ্ছেদ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বর্তমানে ২৮,৯২৫ জন তাদের মধ্যে ৩৮৭ টিতে বাস করে।
দেখা গেছে, প্রথম দফায় জেলার গোয়াইনহাট, গঞ্জ জেলার জিন্তাপুর, কানিঘাট ও জোকিগঞ্জের মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দ্বিতীয় দফায় সিলেটের সব উপজেলার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও নদীর জলস্তর কমেছে, তবুও এই কাউন্টিগুলির বড় এলাকা এখনও জলমগ্ন। এতে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কমছে না। নিচের দিকে পানি সরে যাওয়ায় নিচু এলাকার নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
একই সঙ্গে সুরমা নদীর পানি কমে যাওয়ায় শৈল শহরের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় পানি কমে যাচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় পানি কমছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে সিলেটে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসন বন্যার্তদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী যেমন রান্না করা খাবার, শুকনো খাবার, শিশুর খাবার ও পশুখাদ্য সরবরাহ করছে।