জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) উপদেষ্টা সদস্য মতিউর রহমান সোনালী স্টেট ব্যাংকের একজন পরিচালক। তবে রোববার সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত এ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভায় যোগ দেননি মতিউর রহমান। চলতি সপ্তাহে তাকে বোর্ড থেকেও সরিয়ে দেওয়া হতে পারে।
আজকের সভায় সভাপতিত্ব করবেন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউল হাসান সেদ্দিকী। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তা ও সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। বেঞ্চ মেতিভার রহমানকে আদালতে হাজির না হওয়ার পরামর্শও দেয়, যা তিনি মেনে নেন।
এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে মতিউর রহমানের ছেলে এদেশের রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো থেকে দেড় লাখ তুর্কি ও ঢাকার বিভিন্ন খামার থেকে ৭০ লাখ তুর্কি দিয়ে একটি গরু কিনেছেন।
তারপর থেকে মতিউর রহমানের ছেলে দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি এবং একটি বিলাসবহুল জীবনযাত্রার মালিক। মতিউর রহমান ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি রিসোর্ট, একটি শুটিং রেঞ্জ, একটি বাংলো এবং একটি জমির মতো সম্পত্তির জন্য আলোচনা শুরু হয়েছে।
মতিউর রহমান কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিল ট্রাইব্যুনালের সভাপতি। তিনি সোনালী ব্যাংকের পরিচালকও। আর্থিক প্রতিষ্ঠান মন্ত্রণালয় তাকে ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ থেকে তিন বছরের জন্য সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করেছে। শেখ মুহাম্মদ সলিমুল্লাহ তখন আর্থিক প্রতিষ্ঠান মন্ত্রণালয়ের মহাসচিব ছিলেন। তিনি পুনরায় নিয়োগ পাননি এবং গত মাসে পদত্যাগ করেছেন।
সূত্র জানায়, শেখ মুহম্মদ সলিমুল্লাহ মুতিউর রহমানকে ভালোভাবে চিনতেন এবং সে কারণে তাকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদে নিয়োগ দিতে দ্বিধা বোধ করেন। তবে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবদুল রউফ তালুকদার আর তদবির করতে পারেননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুল রউফ তালুকদারকে শনিবার একটি ছোট হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার মাধ্যমে অভিযোগের সত্যতা জানতে বিবৃতি দিতে বলা হয়। তিনি বার্তাটি দেখেছিলেন কিন্তু উত্তর দেননি। এমনকি শেখ মুহাম্মদ সলিমুল্লাহও কথা বলতে চাননি।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সুপারিশে সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ তাকে বাধা দেয়নি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকও তা সহজেই অনুমোদন করে। জানা গেছে, সাম্প্রতিক ছাগল কেলেঙ্কারির পর মতিউর রহমানের সবকিছু প্রকাশ্যে এলে অন্য ব্যাংক ব্যবস্থাপকরা নড়েচড়ে বসেন। তারা চান না মেতিভার রহমান আর বোর্ডে থাকুক।
এ বিষয়ে মতিভার রহমানের কাছে আজ সকালে তিনটি ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিটার্ন করেননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী, বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের বোর্ডে, জনাব মোহাম্মদ কায়কোবাদ, বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং বাংলাদেশের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল আবুল। কালাম আজাদ ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম আজাদ। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, এবিএম জনাব রোহুল আজাদ, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং, প্রাক্তন ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি, জনাব দৌলতনাহের খানম, প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার, বাকরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, জনাব মোল্লা আব্দুল ওয়াদুদ, জনাব গোপাল চন্দ্র ঘোষ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক পার্টনার, সিএ বসু ব্যানার্জী নাথ অ্যান্ড কোম্পানি।
ব্যাংক সূত্র বলছে, তিনি পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বোর্ডে মেগা-লোনের প্রস্তাব পেশ করার সময় তিনি হস্তক্ষেপ করতে চেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত, কাউন্সিলের অন্যান্য সদস্যদের প্রভাবশালী ভূমিকা তার সাফল্যকে বাধা দেয়। এরপর তিনি ক্ষুদ্র ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন ও প্রত্যাখ্যানে হস্তক্ষেপ করেন যা কাউন্সিলে জমা দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নতুন সচিব আবদুর রহমান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথোপকথন থেকে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের মর্যাদা রক্ষায় মতিউর রহমানকে পরিচালক পদ থেকে অপসারণ করা হতে পারে। রবিবার থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, “মতিউর রহমান আর সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদে থাকবেন না, এটাই স্বাভাবিক। প্রশ্ন হল এমন শত শত লোককে নিয়োগ দেয় যারা সেখানে বসেন।” গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং কেন? সঠিক তদন্ত হলে মতিউর রহমান এনবিআই-এর সদস্য হওয়ার অধিকার হারাবেন বলে আমি মনে করি।