শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১৩ দিন পর দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। তবে শিক্ষা কার্যক্রম এখনো পুরোদমে চলছে না। সহপাঠী হারানোর বেদনা অনুভব করে শিক্ষার্থীরা এখন বিচার দাবি করছে। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজে। শফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফ (১৭ বছর) এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিলেন। স্নাতক শেষ করে তিনি ব্যবসায় যেতে চেয়েছিলেন। তিনি একটি মিউজিক ব্র্যান্ড তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এই সব ইচ্ছা এখন অতীতের জিনিস। এই অদম্য শিষ্য এখন অনন্তের পথে পদার্পণ করেছেন। আহনাফের প্রয়াণে স্মৃতিকাতর সহপাঠীরা।
রোববার (১৮ আগস্ট) ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে আসেন। নির্ধারিত সময়ে প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থানে চলে গেল। কিন্তু পরীক্ষার কক্ষে এখনও জায়গা আছে। এই জায়গায় ফুলের তোড়া রাখা হয়েছিল। আর এক টুকরো কাগজে লেখা আছে ‘শফিক উদ্দিন আহমেদ আনাফ’।
বিএএফ কলেজ শাহীনের ফিন্যান্স শিক্ষক বোরহান উদ্দিন বলেন, “আজ (রবিবার) একাদশ শ্রেণির হিসাববিজ্ঞান পরীক্ষার সময় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আনাফের জায়গা কেউ নিতে পারবে না। তিনি একজন নায়ক। আমরা তাকে নায়ক হিসেবে মনে রাখব। এই চিন্তা মাথায় রেখে আজ আমরা তার জায়গায় ফুলের তোড়া রাখি। এদিকে তোড়া কাগজে ‘শফিক উদ্দিন আহমেদ আনাফ’ লেখা ছোট ক্লাসের পোস্টারের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। নেটিজেনরা একটি ছবি পোস্ট করে তাদের আবেগময় অবস্থা প্রকাশ করেছেন। শফিক উদ্দিন আহমেদ আনাফের প্রতি শ্রদ্ধা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহবুব রহমান লিখেছেন: “বন্ধুরা ফিরে এসেছে, আনাফ ফিরে আসেনি।” এভাবে আর কত মানুষ ফিরে আসবে না! আপনাদের আত্মত্যাগই আমাদের গর্ব। আমাদের বীরদের প্রতি কম শ্রদ্ধা।”
সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন ফেসবুকে লিখেছেন, “এই শিশুরা তাদের জীবন দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছে। আমরা বাড়িতে এটি উপভোগ করি।”
জানা গেছে, শফিক উদ্দিন আহমেদ আনাফ ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ২০২৫ সালে তার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। আনাফ প্রথম থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের জোরালো সমর্থক। আন্দোলনে অংশ নিয়ে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেটে আহত হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।
কিন্তু গত ৪ আগস্ট রাজধানীর মিরপুর-১০ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে নিহত হনআহনাফ। ওই দিন বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আনাফ তার মাকে ফোনে জানায়, সে মিরপুরে ১০ আছে। আনাফের সাথে এটাই ছিল তার মায়ের শেষ কথোপকথন।
তখন একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে। এরপর আনাফের পরিবারের সদস্যরা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে আনাফের লাশ মর্গে দেখতে পান। আনাফকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাদীর কবরে দাফন করা হয়।
এখন আনাফের প্রিয় গিটার সবসময় তার দুই ছোট ভাই আরবিন ও সাদিক রাখেন। আনাফ আর নেই এই বিষয়টি তারা মেনে নিতে পারে না। ভাইয়ের কথা বলতে বলতে ছোট বাচ্চা দুটো খুব কেঁদেছিল।